ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ট্রাম্প অযোগ্য, ফের প্রমাণিত

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
ট্রাম্প অযোগ্য, ফের প্রমাণিত কথা-বার্তায় ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করেছেন তার যোগ্যতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সির জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়

রোববার সন্ধ্যায় যে বহুল প্রত্যাশিত বিতর্ক হয়ে গেলো তাতে প্রেসিডেন্সির জন্য নিজের অযোগ্যতার ফের প্রমাণ দিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প যে অঙ্গীকারগুলো করলেন তা আধুনিক আমেরিকার জন্য মোটেই উপযোগী নয়।

বরং প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে সরাসরি এই হুমকিই দিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি হিলারিকে কারাগারে পাঠাবেন। যা বিতর্কের মঞ্চে কেউ কখনোই শোনেনি।
 
আর এসবে সেই পুরনো প্রশ্নই ঘুরে ফিরে সামনে এলো- আদৌ কি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য? ট্রাম্পের বক্তব্যে নির্বাচন জয়ের কৌশল নিয়ে যতটা নয়, তার চেয়ে হিলারিকে অপদস্থ করার দিকেই ছিলো বেশি ঝোঁক।
 
ওয়াশিংটনের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিতর্কের পুরো ৯০ মিনিটজুড়ে হিলারির ওপর চড়াও হয়ে থাকলেন ট্রাম্প।  
 
তবে উপস্থাপক যখন দু’জনকেই একে অন্যের ব্যাপারে ভালো কোনো একটি দিক সম্পর্কে জানাতে বললেন- হিলারি প্রশংসা করলেন ট্রাম্পের সন্তানদের আর ট্রাম্প বললেন হিলারির হার না মানা প্রাণশক্তির কথাই।
 
ট্রাম্প বলেন, “হিলারি সম্পর্কে আমি বলবো, তিনি কখনো সরে দাঁড়ান না। কোনো কিছু মাঝপথে ছেড়ে দেন না। এই গুণটিকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি বলবো- বিষয়টা এমনই- তিনি একজন যোদ্ধা। তবে যা কিছু নিয়ে তিনি যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তার অনেক কিছুই আমার অপছন্দ। অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই তার বিচারবুদ্ধির সঙ্গে আমি দ্বি-মত পোষণ করি। তবে তিনি কঠোরভাবে যুদ্ধ করে যান, ছেড়ে দেন না আর সেটা অবশ্যই একটি ভালো গুণ বলে বিবেচিত। ”
 
বিতর্কের শুরুটা যেমন ছিলো তার চেয়ে শেষটা নিঃসন্দেহে ছিলো অনেক অনেক ভিন্ন রকম। বিতর্কের শুরুতে মঞ্চে উঠে দুই প্রার্থী একে অন্যের সঙ্গে করমর্দনটুকুও করলেন না।  
 
শুরু থেকেই ট্রাম্প ছিলেন তেঁতো মুডে। কঠোর চেহারা, মনে হচ্ছিলো যেনো কয়েকরাত ঘুমই হয়নি, এমনটাই লিখেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো। বিশেষ করে গত শুক্রবার ‘লকাররুমের সেই কথপোকথন’ প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে তার ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ারই কথা। মুখ শুকিয়ে থাকা চেহারাটি ঠিক এতদিন ধরে যে ট্রাম্পকে সবাই দেখে আসছে তার সঙ্গে যাচ্ছিলো না। তবে মুখে ছিলো তার সেই একই ধরনের কথা-বার্তা। বিতর্ক শুরুতেই এলো যৌনতা প্রসঙ্গ। আর ট্রাম্প, যেমনটা ভাবা হচ্ছিলো ঠিক তাই করলেন, নিজের অপরাধের সাফাই হিসেবে নিয়ে এলেন বিল ক্লিনটন প্রসঙ্গ।
 
ট্রাম্প বললেন, “যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নারীর ওপর ওমন নিপীড়ন আর হয়নি। ”

হিলারি ক্লিনটন ও তার ক্যাম্পেইন শিবির আগে থেকেই এ বিষয়টি ভেবে রেখেছিলো। আর তাদের সিদ্ধান্তও ছিলো, যা কিছুই বলুন না কেনো ডোনাল্ড ট্রাম্প, হিলারির কাজ হবে উপেক্ষা করে যাওয়া। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত শুক্রবারে প্রকাশিত রেকর্ডটার কথাই সামনে নিয়ে আসা। তিনি তাই করলেন।
 
ট্রাম্পও যা করার তাই করলেন, তিনি সরাসরি অস্বীকার করলেন, বললেন, কখনোই তিনি নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালাননি। যা কিছু বলেছেন তা ছিলো বদ্ধকক্ষের আলোচনা। আর বদ্ধকক্ষে এমন কথা বলা কোনোভাবেই নারীর অবমাননা নয়।
 
ট্রাম্প আগে থেকেই বলে আসছিলেন, বিতর্কের রাতে তিনি নারী ও যৌনতার প্রসঙ্গ উঠলে তা বিল ক্লিনটনের ঘাড়ে চালান করে দেবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা করতে ব্যর্থই হলেন।  
 
বিতর্কে দর্শক সারিতেই বসেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন। তাকে কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হয়েছিলো বটে, তবে বিচলিত মোটেই ছিলেন না।
 
বিতর্কের মঞ্চে মাঝে মধ্যেই মনে হচ্ছিলো, ট্রাম্প ঠিক বুঝতে পারছেন না তার কী করা উচিত। মঞ্চে কোনো পোডিয়াম না থাকায় ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কোথায় দাঁড়াবেন। কখনো হিলারির কাছাকাছি, কখনো হিলারি যখন কথা বলছিলেন তার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কখনো চেয়ারের চারিদিকে চক্কর দিচ্ছিলেন, কখনো চেয়ার ধরে ঝুঁকে থাকেন, আর অনেকটা সময়ই প্রতিপক্ষ যখন কথা বলছিলেন, থাকেন চোখ দু’টো বন্ধ করে। তবে মাঝে মাঝেই স্বভাবসুলভভাবে হিলারির কথার মাঝে কথা বলা, হিলারি শেষ করার আগেই নিজের কথা শুরু করা এসব ক্যামেরায় ধরা পড়ে বারবার।  
 
প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্পের অভিযোগ ছিলো, তাকে দুই পক্ষের সঙ্গে বিতর্ক করতে হয়েছে। হিলারি ছাড়াও তার প্রতিপক্ষ ছিলেন উপস্থাপক। কিন্তু এবার তিনি নিজেই উপস্থাপকদ্বয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এরা ছিলেন এবিসি নিউজের মার্থা রাদাজ ও সিএনএন’র অ্যান্ডারসন কুপার। কুপারকেও বারবারই ট্রাম্পকে বলতে হয়েছে, তিনি যেনো হিলারিকে হেনস্তা না করেন। পরের দিকে তো একপর্যায়ে মার্থাকে বিরক্তই হতে দেখা গেছে। ট্রাম্প যখন দু’একটি বিষয়ে বুঝতে পারছিলেন না, তখন উপস্থাপকদেরই তা স্পষ্ট করতে হয়েছে।  
 
এক পর্যায়ে ট্রাম্প যখন বললেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরাকের মজুলে আক্রমণের কথা আগে ভাগে ঘোষণা দিয়েছে, যেন আইএস নেতারা পালিয়ে যাওয়ার পথ পায়। তখন মার্থা রাদাজ নতুন প্রশ্নে যাওয়ার আগে সামরিক বাহিনীকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে ব্যাখ্যা করে দেন।  
 
ই-মেইল প্রসঙ্গে হিলারির ভুল মেনে নেওয়া ও তার দেশের প্রতি অঙ্গীকারের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বললেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এরজন্য তার বিরুদ্ধে বিচার বসাবেন এবং হিলারিকে কারাগারে পাঠাবেন।  
 
এছাড়াও তাকে শয়তান উল্লেখ করে বললেন, হিলারির হৃদয়টা ঘৃণায় ভরা।  

এসব বক্তৃতায় হিলারি কিছুটা শান্তই থাকলেন। তার কৌশল ছিলো ‘ট্রাম্পকে বলতে দাও। তার ভেতরের আগুনটা ছড়িয়ে দিতে দাও। ’ আর ট্রাম্প ঠিক সেটাই করলেন।  
 
বিতর্কের পর দ্রুত জরিপে জানানো হলো ৫৭ শতাংশের ভোটে এই তর্কযুদ্ধও জিতেছেন হিলারি ক্লিনটন।  
 
অনেকের মতে, প্রথম বিতর্কের চেয়ে দ্বিতীয় আয়োজনে ট্রাম্প কিছুটা ভালোই করেছেন। তবে কথা-বার্তায় তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন তার যোগ্যতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সির জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।